2021-08-09 04:51:31
|| ভ্যাক্সিন প্রসঙ্গ ||.
কোভিড-১৯ মহামারির এখন ভ্যাক্সিন অধ্যায় চলছে। চারিদিকে শুধু এই ভ্যাক্সিনের গুঞ্জন। এই ব্যাপারে শুরু থেকে একেবারে আগ্রহ না থাকলেও অনেক ভাইয়েরা এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছেন। তাও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সামনে রেখে। তাই প্রথমে নির্লিপ্ত থাকলেও এখন আল্লাহর ইচ্ছায় দুয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করার প্রয়োজন মনে করলাম।
.
প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন, এই কোভিড ভ্যাক্সিনের চিকিৎসা গুণাগুন কিংবা কার্যকারিতার ফ্যাক্টরকে আমি সমীকরণের বাইরে রাখছি। কেননা একে তো আমি এই ফিল্ডের বান্দা নই। এর ওপর এই বিষয়ের তথ্য উপাত্ত যে সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসছে, তা মোটেও নির্ভরযোগ্য নয়। বরং আগাগোড়া জুলুম আর দুর্নীতিতে ঠাসা তা গু তি সিস্টেম আর মিথ্যা মিডিয়া এইসমস্ত তথ্য সরবরাহ করছে। সুতরাং, ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা, সাইড এফেক্ট ইত্যাদি ফ্যাক্টর সমীকরণের বাইরে। অতঃপর...
.
ভ্যাক্সিন নেওয়ার ব্যাপারে শরিয়াহর সাধারণ ফয়সালা হলো তা জায়িজ। বিশেষ করে সকাল বেলা আজওয়া খেজুর খাওয়ার হাদিস থেকেও বুঝে আসে যে, ভ্যাক্সিনের মতো আসবাব ব্যবহারের সাথে শরিয়াহ সাংঘর্ষিক নয়। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে কোনো রোগ পাঠালে তার নিরাময়ও পাঠান। আর মানুষকে সেই নিরাময় খুঁজে বের করার মতো জ্ঞান আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন, যার ফলাফল হলো ভ্যাক্সিন। অতএব সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে শারঈভাবে ভ্যাক্সিন নেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, তা গু ত প্রশাসনগুলো ভ্যাক্সিনকে যেভাবে বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছে, শারঈভাবে তা সেরকম ওয়াজিব কিছু নয়। বরং মুবাহ ধরনের। কেউ চাইলে দিতে পারে, না চাইলে নেই।
.
তবে আমার আগ্রহের প্রশ্ন এসবেও নয়। অনেক ভাইদের প্রশ্ন হলো তা গু ত প্রশাসনের দেওয়া ভ্যাক্সিন নেওয়া যাবে কিনা? কিংবা আমেরিকার মতো আন্তর্জাতিক তা গু ত দের বানানো ভ্যাক্সিন নেওয়া যাবে কিনা? এই ধরনের প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, জি নেওয়া যাবে। এগুলো তা গু তের প্রতি আনুগত্যের সাক্ষ্য বহন করে না। এমনকি তা গু ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার কথা বলে ভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য করলেও ভ্যাক্সিন নেওয়া ওদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে না। এই মাসআলার সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ হলো - শরিয়তের দৃষ্টিতে ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র বানানো জায়িজ কিনা - এই মাসআলা। একজন মুসলিম হিসেবে বান্দার প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে তা গু তি রাষ্ট্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে নিতে যেমন কোনো সমস্যা নেই, তেমনি তা গু তি প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাক্সিন নিতেও কোনোই সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। [জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য দেখতে পারেন: আর-রিসালাতুস সালাসানিয়াহ, শাইখ মা ক দি সি (হাফিজাহুল্লাহ); পৃষ্ঠা: ১৮৭-১৮৯; হুকমু আখজিল জিনসিয়্যাহ লিলমুকরাহ মিন দাওলাতিন কাফিরাহ, শায়খ হামুদ বিন উ ক লা আশ-শুয়াইবি রহিমাহুল্লা (ফতোয়া); আসইলাতু মিম্বারিত তাওহিদ ওয়াল জি হা দ, প্রশ্ন নং: ৩, ২৫৮, ৬২১, ৩৫৬০]
.
অতঃপর এখানে আরেকটি পয়েন্ট উল্লেখ করবো। আর তা হলো, ভ্যাক্সিন না নিলে যেহেতু আপনার হাজ্জ, উমরাহ কিংবা হিজরতের মতো ব্যাপারে দেশের বাইরে যাবার সময় সমস্যা হতে পারে, তাই আমি বলবো ভ্যাক্সিন নিয়ে এইসমস্ত বাধা দূর করে নেওয়াটাই এখানে হিকমাহ ইনশাআল্লাহ।
.
আর সর্বশেষ যে পয়েন্টটি থাকে, তা হলো তা গু তি প্রশাসন ফ্রি-তে ভ্যাক্সিন দিলে তা জায়িজ হবে কিনা। এই প্রশ্নের মূল পয়েন্টটি হলো তা গু তি প্রশাসনের কোনো একটি সম্পদ (এক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন) মুসলিমদের মধ্যে ফ্রি বিতরণ করলে তা গ্রহণ করা জায়িজ হবে কিনা। আর এই প্রশ্নের সাথে সর্বাধিক সাদৃশ্যপূর্ণ মাসআলাটি হলো – প্রশাসনকে তা গু ত মনে করলেও প্রশাসনের দেওয়া ত্রাণ গ্রহণ করা যাবে কিনা – এই মাসআলা। আর এর উত্তর হলো, তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়িজ। কেননা হা র বি দের সম্পদ ধোঁকা ও চুক্তি ভঙ্গ ব্যতীত অন্য যে কোনো পন্থায় হাসিল হয়, সেই সম্পদ মুসলিমদের জন্য ভোগ করা জায়িজ। দলিল হিসেবে হিদায়া কিতাবে বলা হয়েছে,
.
مالهم مباح في دارهم فبأي طريق أخذه المسلم أخذ مالا مباحا إذا لم يكن فيه غدر -الهداية 3/ 65
.
“দারুল হা-র-বে কা ফি র দের সম্পদ মুবাহ। মুসলিম যে কোনো পন্থায় তা গ্রহণ করবে, সে হালাল সম্পদই গ্রহণ করবে; যদি তাতে কোনো ধোঁকা ও চুক্তিভঙ্গ না থাকে।” [হিদায়া, ৩/৬৫]
.
তবে উক্ত ত্রাণ বা ভ্যাক্সিন গ্রহণের বিনিময়ে যদি তাগুতের প্রভাবের বলয়ে আটকা পড়তে হয় কিংবা নিজের আদর্শ বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে তা গ্রহণ করা যাবে না। তাই এই ধরনের প্রভাবের আশঙ্কা না থাকলে তা গু ত প্রশাসনের ত্রাণ কিংবা এক্ষেত্রে ফ্রি-তে দেওয়া ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশি তা গু তের ফ্রি দেওয়া ভ্যাক্সিন নিতেও সমস্যা নেই, এমনকি আমেরিকা কিংবা চীনের বানানো ভ্যাক্সিন নিতেও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।
545 views01:51
আ
