2022-05-21 13:46:09
বিষমাখা রুটি
বিয়ের আগে দাদু বলতেন:
রিফদা! কাজ যাই করিস, আল্লাহর জন্যই করবি। আর যাই খাবি, যতটা পারিস একজন গরীবকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করিস।
দাদু তো এখন জান্নাতে। কত বছর আগে, কিন্তু স্বামীর সংসারে এসেও কথাটা সব সময় মনে থাকে।
শাশুড়ী ভাত খেতে পারেন না। বেশির ভাগ সময় রুটি খেয়ে থাকেন। সেজন্য দিনে কখনো তিন বেলাই রুটি বানাতে হয়। উনি আবার বাসি রুটি খেতে পারেন না।
রিফদা প্রতিদিন রুটি বানাতে বসলে, একটা রুটি বেশি বানায়। সবাইকে লুকিয়ে রুটিটা জানালায় রেখে দেয়। একজন বৃদ্ধ লোক লাঠি ঠকঠক করে এসে চুপিচুপি রুটিটা নিয়ে যায়।
শুরু হয়েছিলো অরো একমাস আগে। একদিন বৃদ্ধটা জানালার পাশে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। রিফদা লোকটাকে দেখে ব্যথিত হলো। একটা রুটি বাড়িয়ে দিলো। লোকটা প্রায় ছোঁ মেরে রুটিটা নিলো। গাপুস গুপুস করে খেয়ে ফেললো। পরদিনও বৃদ্ধ এসে হাজির। রিফদা আবারও তাকে একটা রুটি দিলো। এভাবে প্রতিদিন।
একটা বিষয় দেখে রিফদা অবাক হতো। প্রতিদিন রুটি নিয়ে যেতো, কিন্তু কোনো কৃতজ্ঞতা জানাতো না। প্রশংসা তো দূরের কথা। রিফদা একদিন লক্ষ্য করে দেখলো লোকটা রুটি খেয়ে উঠে দাঁড়ানোর সময় বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।
পরদিন কান পেতে শুনলো, লোকটা বলছে: ‘খারাপ কাজ নিজের কাছেই থেকে যায়। ভালো কাজ উপহার হয়ে ফিরে আসে’।
এভাবেই চলছিলো। কিন্তু লোকটার প্রতিদিন একই কথা শুনে রিফদা বিরক্ত হয়ে উঠলো। এমন অকৃতজ্ঞ লোকটাকে একটা শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছা করলো।
গতকালের একটা বাসি রুটি ওষুধ মাখিয়ে ইঁদুর মারার যন্ত্রে রেখেছিলো। ওটা আস্ত রয়ে গেছে। ইঁদুর ছুঁয়েও দেখেনি। আজ ওটাই জানালার পাশে রেখে দিলো। এই রুটি খেয়ে লোকটা মরবে না। কিন্তু পেটে সমস্যা হবে। একটা শিক্ষা তো হবে।
কিছুক্ষণ পর রিফদার মনে অনুশোচনা জাগলো। সে এটা কী করছে? সে কি প্রতিদান আর প্রশংসার জন্য এ কাজ করছে?
সে তাড়াতাড়ি রুটিটা সরিয়ে একটা ভালো রুটি রেখে দিলো। যথসময়ে লোকটা এলো। রুটি নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বললো:
‘খারাপ কাজ নিজের কাছে থেকে যায়। ভালো কাজ উপহার হযে ফিরে আসে’।
রিফদার স্বামী অন্য শহরে চাকরি করে। সেদিন বিকেল বেলা রিফদা ঘরের টুকিটাকি কাজ সারছিলো। এমন দরজায় টোকা পড়লো। দরজা খুলে দেখলো স্বামী দাঁড়িয়ে আছে। দুচোখ ঘোলাটে। পরনের জামা-কাপড় মলিন আর শতচ্ছিন্ন।
তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে বসালো। পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বললো:
তোমার এই অবস্থা কেনো?
-বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে। আসার দিন গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লো। অধিকাংশ যাত্রীই মারাত্মকভাবে আহত। আল হামদুলিল্লাহ আমি অক্ষতই ছিলাম। সাথে টাকাপয়সা যা ছিলো সব গাড়ির সাথেই নদীতে ডুবে গেছে।
হেঁটে হেঁটে বাড়ি আসছিলাম, আজ কয়েকদিনের অভুক্ত ছিলাম। পা আর চলছিলো না। আমার টলোমলো পা দেখে একজন বৃদ্ধ লোক আমার হাত ধরলো। তার কাছে একটা রুটি ছিলো, সেটা খেতে দিলো।
রুটিটা খেয়েই এতদূর হেঁটে আসার শক্তি পেলাম।
শাইখ আতীক উল্লাহ হাফি.
139 views10:46