Get Mystery Box with random crypto!

পলাশীর দাসত্বের শৃঙ্খল আজও জাতি বহন করছে -ডা. ফখরুদ্দিন মানিক | Bangladesh Islami Chhatrashibir

পলাশীর দাসত্বের শৃঙ্খল আজও জাতি বহন করছে
-ডা. ফখরুদ্দিন মানিক

ঐতিহাসিক পলাশী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক কবি সোলায়মান আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী। এসময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, ১৭৫৭ সালে যে দাসত্বের শৃঙ্খল আমাদের গলায় পড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো তা আজ পর্যন্ত আমাদের দেশ ও জাতি বহন করে চলেছে। ১২০৩ বা ১২০৪ সালে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি এ উপমহাদেশে বিজয়ের সূচনা করেছিলেন। তিনি অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ন্যায় বিচার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সভ্যতা গড়ার যে সূচনা করেছিলেন তা প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর অব্যাহতভাবে চলেছে। কিন্তু পরবর্তী গোলামীর জিঞ্জির আমাদের চিন্তা, শিক্ষা, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক জায়গাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তা এখনো অব্যাহত আছে। সুকৌশলে ইংরেজদের মদদপুষ্ট লেখক, গবেষক, ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিকদের দিয়ে আমাদের গৌরবজ্জল ইতিহাসকে আড়াল করা হয়েছে। ফলে আবার জেগে উঠার প্রবণতা বহু ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে। পলাশীর ঘটনার সাথে চাতুরতার সাথে শুধু মীর জাফরকে বড় করে সামনে আনা হয়েছে। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রের পেছনের মূল ভূমিকা পালনকারী জগৎশেঠ, রাজভল্লব, উমিচাদ, নন্দ নারায়নদের আড়াল করা হয়েছে। অথচ সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ৭টি প্রশাসনিক পদের ৬টিতেই ছিলো হিন্দুরা। ১৯জন রাজা-জমিদারের ১৮ জনই ছিলো হিন্দু। ঐতিহাসিকরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, সেদিন যদি ষড়যন্ত্রে মীর জাফর রাজি না হতো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা অন্য কাউকে সে জায়গায় খুঁজে নিতো। সুতরাং শুধু একজন মীর জাফরকে সামনে এনে ইতিহাস পাঠ ন্যায় সঙ্গত নয়। একইসাথে নানাভাবে সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রও খনন করা হয়েছে।

পলাশীর ঘটনার প্রভাব ছিলো সুদূর প্রসারী। প্রথমত সমৃদ্ধ অঞ্চল বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে সুকৌশলে। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ পাউন্ড বাংলা থেকে ইউরোপে পাচার করা হয়েছিলো। কোন কোন ঐতিহাসিক লিখেছেন, ইউরোপের শিল্প বিপ্লব হয়েছে আমাদের অঞ্চলের পাচার করা টাকায়। যার প্রভাবে ১১৭৬ বাংলা সনে বাংলায় দূর্ভিক্ষে প্রায় দেড় কোটি মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে। ষড়যন্ত্রের এ ধারা হারিয়ে যায়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের এক এগারো, করোনাকালিন সময়সহ বিভিন্ন ঘটনায় জাতি দেখেছে আমাদের দেশের রাজনীতি বা সরকার কোন পক্ষের দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করছে। সুতরাং দেশ ও জাতির মুক্তি, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আজ জাতীয় ঐক্য বড় প্রয়োজন। একইসাথে ছাত্রসংগঠনেরও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন জরুরি। আমরা আশা করি, জাতির ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রশিবির ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।

প্রধান আলোচকের আলোচনায় কবি সোলায়মান আহসান বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলমানরা ব্যক্তিগতভাবে জ্ঞান চর্চা থেকে বিমুখ। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বর্তমান প্রজন্ম তাদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানে না। আর যা জানার সুযোগ হয় তাও মিথ্যা, একপেশে ও বিভ্রান্তিতে ভরপুর। ফলে পলাশী ষড়যন্ত্রের মত একই ষড়যন্ত্র বর্তমানে চললেও নতুন প্রজন্ম তা বুঝতে পারছে না। বিদেশীদের হাতে বড় বড় প্রজেক্ট দিয়ে দেয়া ও বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে জাতিকে পরনির্ভর এবং জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। জাতি বিশেষ করে তরুণরা আত্মসচেতন না হলে জাতির সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এ জন্য পলাশীসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশি বেশি ইতিহাস নির্ভর বই পড়তে হবে।