2022-06-03 15:24:08
মূল্যস্ফীতির কারণে চিকিৎসা পেছাতে বাধ্য হচ্ছে রোগীরা
এক সপ্তাহ ডায়ালাইসিস করতে না পারলে শরীরে পানি জমে যায় রাজধানীর মণিপুরিপাড়ার বাসিন্দা মমতা বেগমের (৫৩)। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হলেও ছয় বছর ধরে সপ্তাহে দুইদিন নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতেন তিনি। কিন্তু এখন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ মিটিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মমতা বেগমের স্কুল শিক্ষক স্বামী। তাই কখনো সপ্তাহে একদিন ডায়ালাইসিস করছে আবার কখনো এক-দুই সপ্তাহ ডায়ালাইসিস বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মমতা বেগম বলেন, টানা কয়েক সপ্তাহ ডায়ালিসিস করাতে না পারলে চলাফেরা করতে পারি না। তখন ধারদেনা করে আবার ডায়ালিসিস করাই। এভাবে আর কতদিন চলবে জানি না।
শুধু মমতা বেগম নয়, অর্ধ লাখের বেশি বেতন পাওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী কুতুব উদ্দিন সংসার খরচ মিটিয়ে স্ত্রী ও মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এরইমধ্যে ঢাকায় ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে মেসে উঠেছেন। কুতুব উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, টাকা যোগাড় করতে পারিনি, তাই আমার মা ও স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছি না
দ্রব্যমূ্ল্য বেড়ে যাওয়ায় মমতা বেগম ও কুতুব উদ্দিনের মত অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা না করিয়ে রোগ পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। নিজেদের চিকিৎসার ৬৮.৫০ শতাংশ ব্যয় মেটাতে হয় বাংলাদেশিদের। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এই অর্থ ব্যয় করতে পারছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের (আইএইচই) অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ টিবিএস-কে জানান, সাধারণত দ্রব্যমূল্য বাড়লে মানুষ শুরুতে কম প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাদ দিয়ে তারপর খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যয় কমায়। "জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিলে খাবারের ব্যয় কমাচ্ছে। এতে করে পুষ্টি ঘাটতি হচ্ছে। আবার খাবারের ব্যয় না কমালে রোগ পুষে রাখছে, দেরিতে চিকিৎসা নিচ্ছে।"
সূত্রঃ The Business Standard (https://tinyurl.com/4hst4ezw)
===========================
এটিই হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের বর্তমান অবস্থা। মূল্যস্ফীতির "আশীর্বাদে" আজ তাঁরা নিজেদের চিকিৎসা ব্যয়টুকুও মেটাতে অক্ষম। চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে তাঁরা খেতে পারছেন না। আবার খাবার পেছনে খরচ করতে গেলে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না, রোগ পুষে রাখছেন। এতে মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
এভাবেই চলতে চলতে একদিন মানুষ হয়তো তাঁর মৌলিক চাহিদাগুলোও মেটাতে অক্ষম হয়ে যাবে। না তাঁর কাছে পেট ভরার জন্য কোন খাবার থাকবে, আর না থাকবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা। না থাকবে থাকার মতো ভালো কোন জায়গা, আর না থাকবে কোন ভালো মানের শিক্ষা ব্যবস্থা। এভাবেই খুব ঠান্ডা মাথায় দেশের মানুষদের পিঠ ঠেকিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেয়ালে, সুচতুর ভাবে দেশের মানুষদের করা হচ্ছে আরও গরীব।
অথচ আমাদের মন্ত্রীদের মতে দেশের অবস্থা খুব ভালো, দেশের মানুষ এখন তিনবেলা মাংস খেয়ে থাকতে পারে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এভাবেই একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছে তারা। কারণ তারা জানে যে এই দেশের মানুষ কখনও প্রতিবাদ করবে না। আর যদি প্রতিবাদ করেও তো তাদেরকে নিরাপত্তা দেবার জন্য প্রস্তুত আছে তাদের অনুগত "গুন্ডাবাহিনি"।
সুতরাং এর সমাধান তাহলে কি? অবশ্যই এর সমাধান নিহিত আছে দেশের বর্তমান মানবরচিত অকার্যকর শাসন ব্যবস্থাকে ছুঁড়ে ফেলার এবং সৃষ্টিকর্তার বিধানকে আঁকড়ে ধরার মধ্যেই। তাই এখনও সময় আছে, আসুন, আসন্ন দিনগুলোর ব্যপারে আমরা নিজেরাও সাবধান হই এবং অন্যদেরকেও এ ব্যপারে সাবধান করি।
1.0K views12:24