Get Mystery Box with random crypto!

সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১০টি করণীয় (কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা এ | হালাল রোমান্টিসিজম

সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১০টি করণীয়
(কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা এবং পূর্বসূরিদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শের আলোকে):
.
(১) পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও উত্তম আচরণ:
.
অনেক দম্পতির মাঝে ভালোবাসা সত্ত্বেও প্রায়ই ঝামেলা হয়। কারণ তারা একে অপরকে সম্মান দিতে জানে না। এটা খুব জরুরি। আয়িশা (রা.) বলেন, নবিজি কোনোদিন তাঁর কোনো স্ত্রীর গায়ে আঘাত করেননি (মুসলিম, আস-সহিহ: ২৩২৮)।
.
(২) ভালোবাসা প্রকাশ করা:
.
এটা তো সবাই জানি, একটি সম্পর্কের স্থায়িত্বের জন্য ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। তবে, ভালোবাসা শুধু মনে না রেখে মুখেও রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে লজ্জা ঝেড়ে ‘I Love You’ বা এ জাতীয় কথা মুখ ফুটে বলতে হবে। আয়িশা (রা.) পাত্রের যে স্থানে মুখ দিয়ে পান করতেন, নবিজি ঠিক সেখানে মুখ দিয়ে অবশিষ্ট পান করতেন। অথচ তখন তিনি হায়েযা (পিরিয়ডে) ছিলেন। [নাসায়ি, আস-সুনান: ৩৮৭]
.
(৩) পারস্পরিক বিশ্বাস ও সুধারণা:
.
একে অপরকে চোখ বুজে বিশ্বাস করার মতো আস্থা তৈরি করতে হবে। জীবনসঙ্গীর সাথে কখনও মিথ্যা বলা যাবে না বা প্রতারণা করা যাবে না। একবার বিশ্বাস ভেঙে গেলে সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়। তাই, কখনই এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে পরস্পরে অবিশ্বাস, সন্দেহ ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়।
.
খুব ভালোভাবে জেনে রাখবেন: দাম্পত্যসম্পর্কের স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তার খুঁটি হিসেবে তিনটি বিষয় কাজ করে: পারস্পরিক ভালোবাসা, একে অপরকে সম্মান করা এবং পরস্পরে বিশ্বাস রাখা। এর কোনোটি না থাকলে সম্পর্ক জটিল হয়ে পড়ে।
.
(৪) পরস্পরের জন্য আন্তরিকভাবে দু‘আ করা:
.
কুরআন থেকে সুন্দর একটি দু‘আ:
.
رَبَّنَا هَبْ لَـنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
.
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানান। [সূরা আল-ফুরক়ান, আয়াত: ৭৪]
.
এটি স্বামীর জন্য স্ত্রীও পড়তে পারবেন।
.
(৫) প্রতিযোগিতা নয়, চাই সহযোগিতা:
.
আয়িশা (রা.) নবিজি সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬০৩৯]
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল; সে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৬৫৩]
.
জীবনসঙ্গীকে কখনও ‘প্রতিযোগী’ ভাববেন না, বরং ‘সহযোগী’ মনে করুন। দুটো দেহের একটি আত্মা হয়ে চলুন। স্যাক্রিফাইস করার মানসিকতা গড়ুন।
.
(৬) স্বামীর দায়িত্ব ও স্ত্রীর আনুগত্য:
.
দাম্পত্যজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্বামীকে অবশ্যই তার স্ত্রী ও সংসারের যাবতীয় বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। আর, স্ত্রীকে অবশ্যই স্বামীর সকল বৈধ আদেশ মানতে হবে। কারণ, আল্লাহ স্বামীকে দায়িত্বশীল বানিয়েছেন। সুতরাং পরিবারের কর্তা হিসেবে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে। তবে, এই আনুগত্যের দোহাই দিয়ে স্ত্রীর উপর যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ছড়ি ঘুরানো যাবে না। বরং স্ত্রীর সাথে যথাসাধ্য পরামর্শ করে সংসারকে সুশোভিত করার চেষ্টা করতে হবে।
.
(৭) তৃতীয় পক্ষ থেকে সতর্কতা:
.
দাম্পত্যজীবনে মনোমালিন্য হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে, এই মনোমালিন্যের বিষয়টি নিজেদের মাঝে রাখতে হবে এবং নিজেরা নিজেরা মীমাংসা করতে হবে। কখনই কোনো তৃতীয় পক্ষকে সমাধানের জন্য আনা যাবে না। মনে রাখবেন, অধিকাংশ তালাক হয় তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের কারণে। সমাধানের জন্য এসে সংসারটা ভেঙে বিদায় নেয়। তবে, কখনও বড় ধরনের ঝামেলা হলে পারিবারিকভাবে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
.
(৮) কারও সাথে তুলনা নয়:
.
কোনো মানুষ পারফেক্ট না। প্রত্যেকের কম-বেশি ঘাটতি থাকে। তাই, কখনও অন্যের উদাহরণ দিয়ে জীবনসঙ্গীর ঘাটতি নিয়ে কথা বলা যাবে না। এই বিষয়টি সংসারে প্রচণ্ড বিদ্বেষ তৈরি করে এবং কুধারণার সূত্রপাত ঘটায়। অহেতুক সন্দেহের বীজ রোপিত হয় নিজেদের পবিত্র সম্পর্কে।
.
আব্দুর রাযযাক আল হালাবি (রাহ.) উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তোমার স্ত্রীর সামনে অন্য কোনো নারীর প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকবে। তাছাড়া, তোমার মায়ের সামনেও তোমার স্ত্রীর প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকবে।’
.
(৯) একসাথে রাগা যাবে না:
.
সাহাবি আবুদ দারদা (রা.) তাঁর স্ত্রী উম্মু দারদাকে বলেছিলেন, ‘যখন আমি রাগান্বিত থাকবো, তখন তুমি আমাকে খুশি করবে আর যখন তুমি রাগান্বিত থাকবে, তখন আমি তোমাকে খুশি করবো। এমনটি না করলে একসাথে চলা সম্ভব হবে না।’ [ইবনু হিব্বান, রওদ্বাতুল উক্বালা, পৃষ্ঠা: ২০৪]
.
অনেক পুরুষ মনে করেন, কোনো স্ত্রী কখনও স্বামীর উপর রাগ করতে পারবে না। অথচ, কখনও কখনও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অভিমান করে তাঁর স্ত্রীরা তাঁর থেকে পুরো দিন দূরে থেকেছেন। (বুখারি, আস-সহিহ: ৮৯; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৪৭৯)। যদিও তাঁরা বেয়াদবি করতেন না। প্রয়োজনে অভিমানমিশ্রিত রাগারাগি দোষের কিছু নয়।