2021-10-05 16:48:18
মেডিকেলের ইতিহাসে এই একজন যিনি সেকন্ড টাইমার হিসেবে মেডিকেলে ফার্স্ট হয়েছেন
আমি প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেলে চান্স পাইনি। ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম। সেইবারের মত ভর্তি হই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, আপ্ল্যাইড ফিজিক্সে। কিন্তু মন টেকেনি। ৫ দিন ক্লাস করে চলে আসলাম। বাসায় বললাম, আবার মেডিকেলের জন্য চেষ্টা করব। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমার বাবা মা আমার সকল সিদ্ধান্তে আমার পাশে ছিলেন। অনেক ঝুঁকি নিয়েই ভর্তি বাতিল করে মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। শুরু হল এক বছরের এক অনিশ্চিত যাত্রা।
একজন সেকেন্ড টাইমার মেডিকেল পরীক্ষার্থীর জন্য এই এক বছরের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। লক্ষ্য অর্জনে একাগ্রতা যেমন এসময় বাড়ে। একই সাথে সব হারানোর একটা ভয়ও কাজ করে। আমি দেখতাম আমার বন্ধুরা ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শুরু দিয়েছে, অনেকেই আবার ছিল মেডিকেলেই। খুবই কষ্ট লাগতো, ওই একটা বছর ডিপ্রেশনের সাথে কম লড়াই করিনি। সকল হতাশা লুকিয়ে রেখেই পড়তে বসতাম। কি পরিমান শ্রম দিয়েছি এখনো ভাবতে অবাক লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে থাকতাম, কত শত প্রশ্ন সলভ করেছি কোন হিসাব নেই। মাঝে মাঝে এত খারাপ লাগতো যে মনে হত আমার পক্ষে আর সম্ভব না। কিন্তু তখনই মনে করতাম আমি কেন শুরু করেছি। মনে বিশ্বাস রেখেছি যে আমি পারবোই।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বেশ ভাল দিলাম। বের হয়ে শুনলাম, সবারই বেশ ভাল হয়েছে। প্রশ্ন মিলাতে যেয়ে দেখলাম, কয়েকটা ভুল করেছি। আমার মধ্যে ভয় ঢুকে গেল যে এবারও হয়ত হবে না। এরপরের দুইদিন যে কি দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম বলতে পারবো না। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম। রেজাল্টের দিন দুপুরে মোবাইলে মেসেজ আসলো। আমার নামের নিচে পজিশনের জায়গায় লেখা- ০০১। আম্মু আমাকে আমার আপুসহ জড়িয়ে ধরেছিল। আমি এক বছর যে পরিশ্রম করেছি, সৃষ্টিকর্তা তার ফল দিলেন ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থানের মাধ্যমে।
রোল ১ হবার বিড়ম্বনা কম না। সবসময় ভাইভা আমাকে দিয়ে শুরু হয়। টিচাররা সবসময় ক্লাসে এসে আমাকেই প্রথমে খুঁজেন। ক্লাস পালানোর তো প্রশ্নই আসেনা! তারপরেও খুবই গর্ব হয় যখন নিজেকে আমার প্রাণপ্রিয় ব্যাচ বাঁধভাঙা বাহাত্তরের মুখপাত্র ও প্রতিনিধি হিসেবে দেখি। রোল ১ হবার কারণে শিক্ষকদেরো সান্নিধ্যে আসা যায়। এটা এমন একটা সুযোগ যেটা পাবার সৌভাগ্য সকলের হয়না।
আমি মনে করি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাবার জন্য যেই গুণটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল ধৈর্য। এর পাশাপাশি দরকার পরিশ্রমের। আমাদের মধ্যে অনেকেই অসম্ভব মেধাবী আছে কিন্তু শুধুমাত্র পরিশ্রম ও চর্চার অভাবে তারা ভর্তি পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ে। জীবনে সফল হতে পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের কোন বিকল্প নেই। আর হ্যা, আমি মিরাকেলে বিশ্বাস করি। অতএব চেষ্টা চালিয়ে যাও, নিজের সামর্থ্যের উপর আস্থা হারিয়ো না আর বিশ্বাস রাখো যে তোমার জন্যও একটি মিরাকেল অপেক্ষা করছে।
Iffat Kamal Bappy
K-72
First position in Medical Admission test 2014-15
1.4K views13:48