Get Mystery Box with random crypto!

রসুলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم)-এর দুনিয়া থেকে চিরবিদায়ের ৫ দি | Tazkiyah

রসুলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم)-এর দুনিয়া থেকে চিরবিদায়ের ৫ দিন পূর্বের একটি ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করা যাকঃ

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মৃত্যুকালীন অসুখে আক্রান্ত, শরীরে ছিল প্রচন্ড জ্বর, মাথায় পট্টি বাধা। কয়েক মশক পানি শরীরে ঢালার পর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু সুস্থতা অনুভব করলেন এবং চাচাতো ভাই ফযল ইবনু আব্বাস রাযিঃ এর হাত ধরে মাসজিদে নববীর মিম্বরে গিয়ে পৌঁছলেন। লোকেরা মিম্বরে সমবেত হওয়ার পর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবেগঘন কিছু কথা বললেন এবং ব্যক্তিগত দেনা-পাওনা সংক্রান্ত কিছু বিষয় মিটমাট করলেন। নামায আদায়ের পর তিনি পুনরায় মিম্বরে উপবেশন করলেন এবং একসময় বললেন,

"তোমাদের কেউ যদি তার নিজ সম্বন্ধে কোনো কিছুর আশংকা করো, তবে সে দাঁড়িয়ে তা বলুক, আমি তার জন্য দু'আ করব।"

এই সময়ে একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, "আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম, আমি ঘোর মিথ্যাবাদী, নিঃসন্দেহে আমি একজন মুনাফিকও বটে এবং আমার ঘুম খুব বেশি।" রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "হে আল্লাহ! একে সত্যবাদিতা ও ঈমান গুণ দান কর এবং সে যখনই চায়, তখন হতেই তার থেকে ঘুম দূর করে দেন"

তারপর আর একজন লোক দাঁড়িয়ে বললো, "হে আল্লাহর রসূল! নিশ্চয়ই আমি অত্যন্ত মিথ্যবাদী, নিশ্চয়ই আমি মুনাফিক এবং এমন কোনো বদ কাজ নাই, যা আমি করিনি।" তখন উমার রাযিঃ তাকে বললেন, "ওহে লোক! তুমি নিজেকে লাঞ্চিত করলে।" এতে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "হে খাত্তাবের তনয়, থামো। আখিরাতের লাঞ্চনার তুলনায় দুনিয়ার লাঞ্চনা অত্যন্ত নগণ্য ও সহজে সহনীয়। " তারপর তিনি বললেন, "হে আল্লাহ! তুমি একে সত্যবাদিতা ও ঈমান দান কর এবং সকল ব্যাপারে তাকে মঙ্গলের দিকে ফিরাও।" [১]

এরপর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো কিছু নাসীহাত ও কথা বলেছিলেন উপবিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম রাযিঃ-কে। আমরা সেগুলোর আলোচনায় আপাতত যাচ্ছি না।

যে কথা বলার উদ্দেশ্যে এই ঘটনার অবতারণা করা, আমাদের মধ্যে এমন অসংখ্য ভাই/বোন আছেন, যারা গোনাহের চক্রে আবদ্ধ, অন্তরে মুনাফিকীর ব্যাধি রয়েছে, অনেক মন্দ গুণাবলী বিদ্যমান নিজেদের মধ্যে। শত চেষ্টা করেও এগুলো থেকে বের হতে পারছেন না। তাওবাহ করার পর এর স্থায়ীত্ব কম হয়। লজ্জা ও ভয়ে কাউকে এগুলো বলতেও পারছেন না। হাদীসে এসেছে, গোনাহের কথা প্রকাশ করা ঠিক না। কিন্তু কেউ যদি এগুলো থেকে নিজের চেষ্টায় বের হতে অপারগ হয়, তার জন্য নিজের অবস্থা কোনো নির্ভরযোগ্য আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির কাছে পেশ করার অবকাশ আছে। কেননা, দুনিয়ায় এই গোনাহের চক্র থেকে বের না হতে পারলে, আখিরাতে লাঞ্চনা অপেক্ষা করছে। এজন্য, ঐসব ভাই/বোনদের জন্য সীরাতের এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে।

আল্লাহওয়ালা কোনো আলিমের পরামর্শ ও নাসীহাত আমাদের আত্মিক সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যেই সমস্যাগুলো আমরা নিজেরা শত চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারছি না। আল্লাহর কাছে দুয়া ও সাহায্য কামনা তো অবশ্যই প্রয়োজন, এর সাথে মুহাক্কিক কোনো আলিমের কাছে নিজের দৈন্য অবস্থা পেশ করে তাঁর মাশওয়ারা (পরামর্শ) অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে ইন শা আল্লাহ মন্দ অভ্যাসগুলো দূর করা সহজ হবে। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীরীভাবে দুনিয়ায় নেই, কিন্তু উনার ওয়ারিশ হিসেবে মুহাক্কিক উলামাগণকে রেখে গেছেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জিম্মাদারী পালনের গুরুদায়িত্ব সবচেয়ে বেশি অর্পিত উলামাদের উপর। উনারা দুয়া ও পরামর্শের মাধ্যমে আওয়াম (সাধারণ) মানুষকে সত্য পথ দেখিয়ে দিবেন। তাই প্রত্যেকেরই উচিত, জীবনে চলার পথে এমন কোনো নির্ভরযোগ্য আলিমের সোহবাত ও মাশওয়ারা (পরামর্শ) অনুযায়ী চলা।

বোনদের জন্য এমন কোনো মুখলিস আলিমা/উস্তাযাহ খুঁজে নেওয়াটা জরুরী। যার পরামর্শ অনুযায়ী নিজের সমস্যাগুলো সমাধান করা সহজ হবে। সর্বোপরি, পরামর্শের মধ্যে খায়ের ও বরকত রয়েছে। পরামর্শ করে চললে বে-ইজ্জতী ও অপদস্থতা থেকে আল্লাহ হিফাযাত করে থাকেন।

#তথ্যসূত্রঃ
[১]
>ইমাম হায়সামী রহিঃ-কৃত মাযমা'উয যাওয়াইদঃ ৯/২৫-২৬ পৃষ্ঠা

>ইমাম তিরমিযী রহ.-কৃত শামায়িলুন নাবী (স), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, (১৩৭ নম্বর হাদীসের ব্যাখ্যা) পৃষ্ঠাঃ ২৩৩

>তাবারানী, আবু ইয়া'লা।

>আর-রাহীকুল মাখতুম (রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের ৫ দিন আগে)
- Naseehah গ্রুপ থেকে সংগৃহীত।
( অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়, আল্লাহ আমাদের এই নাসিহাহ থেকে সকল কল্যান অর্জনের তৌফিক দান করুক।)