Get Mystery Box with random crypto!

(১) আমার জন্মের আগেই আমার দাদা মারা গেছেন। নানার চেহারা কেমন | Arif Azad

(১)

আমার জন্মের আগেই আমার দাদা মারা গেছেন। নানার চেহারা কেমন ছিলো— সেটাও মনে করতে পারি না। তবে আলহামদুলিল্লাহ, দাদী আর নানীকে পুরোপুরিভাবে পেয়েছি জীবনে। খুব সম্প্রতিই তারা আমাদের ছেড়ে গেছেন।


আমি খেয়াল করেছি— যখন কোন ঘরোয়া আড্ডা হয়, আমার আলাপের কোথাও আমি আমার দাদা কিংবা নানার গল্প করতে পারি না। যেহেতু তাদের সাথে মনে করতে পারার মতো কোন স্মৃতিই আমার স্মৃতিপটে নেই, তাই তাদের নিয়ে কোন গল্প করতে না পারাটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে আমার দাদী আর নানীকে নিয়ে আমার ঝুলিতে অনেক গল্প জমা— যা প্রায়-ই আমার মনে পড়ে। একান্ত অবসরে আমি সেই স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াই। কোন বয়োবৃদ্ধ নারী দেখলে আমার দাদী আর নানীর কথা মনে পড়ে। ভাবি— ইশ! আজকে যদি তারা বেঁচে থাকতেন!


মানুষ খুব স্মৃতি-কাতুরে। জীবনের পরতে পরতে স্মৃতি হিশেবে সে শুধু তা-ই রোমন্থন করতে পারে যা কেবল তার স্মৃতি-ঘরে জমা থাকে। স্মৃতিঘরে কোন স্মৃতি জমা নেই— এমন কাউকে সে খুব কম মনে করে জীবনে।



(২)


আমার মনে হলো— যারা খুব বয়স করে বিয়ে করে বা বয়স করে বিয়ে করার পক্ষপাতী— এই জায়গাটায় তারা একটা ভুল করে থাকে। সেই ভুলটা হলো— তাদের সন্তানদের স্মৃতিতে তাদের বাবা-মা'কে জাগরুক না রাখতে পারা।


ধরা যাক একলোক বিয়ে করলো ত্রিশ বছর বয়সে যখন তার বাবা-মা'র বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। তার সন্তানাদি যখন বোঝার বয়সে উপনীত হবে— তখন তার বাবা-মা সত্তরের ঘরে চলে যাবে কিংবা ততোদিনে দুজনের একজন বা উভয়েই দুনিয়ার পাঠ চুকিয়ে আখিরাতের পথে যাত্রা করবে।


তার সন্তানদের স্মৃতিতে কিন্তু দাদা-দাদীর কোন স্মৃতি জমা হবে না যা তারা রোমন্থন করতে পারে। জীবনের একান্ত অবসরে তাদের কথা মনে করে যে একটু আবেগাপ্লুত হবে, একটু উদাস হয়ে ভাববে তাদের সাথে কাটানো শৈশব-কৈশোরের কথা— সে উপায় নেই। শুধু বাবা-মা'র মুখে গল্প শুনে যাবে— তোমার দাদা তোমাকে এতো ভালোবাসতেন, তোমার দাদীর সামনে তোমাকে তো আমরা একটু বকাও দিতে পারতাম না। রেগেমেগে অস্থির হয়ে যেতেন। তোমার নানী তো তোমাকে না দেখে থাকতেই পারতেন না।


কিন্তু, বাবা-মা'র মুখে শোনা দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর গল্প তাকে ঠিক সেভাবে আচ্ছন্ন করবে না, যেভাবে আচ্ছন্ন করতো যদি স্মৃতি থেকে সে ওই ঘটনাগুলোকে মনে করতে পারতো।


যদি চান আপনার বাবা-মা আপনার সন্তানদের স্মৃতি রোমন্থনে, তাদের দুয়াতে, তাদের অবসরের আলাপজুড়ে বেঁচে থাকুক— তাহলে খুব দেরি করে বিয়ে না করাই উত্তম।


প্রত্যেক বাবা-মা'র আশেপাশে সর্বদা শিশুদের উপস্থিতি থাকতে হয়। আমরা বড় হয়ে যাওয়াতে আমাদের বাবা-মা'র আশেপাশে থাকতে পারি না, আমাদের সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারে আমাদের সন্তানেরা। আবার, তারা যখন বড় হয়ে যাবে, আমাদের আশেপাশে তাদের সন্তানেরা তাদের শূন্যস্থান পূরণ করতে চলে আসবে।