Get Mystery Box with random crypto!

মৃত্যুচিন্তা—আখিরাত বিনির্মাণের সোপান : মানুষ চরম উদাসীন, বড়ই | ইসলামি বই

মৃত্যুচিন্তা—আখিরাত বিনির্মাণের সোপান :

মানুষ চরম উদাসীন, বড়ই গাফিল! উদাসীনতা আর গাফলতিতেই কেটে যায় তার জীবনের বৃহৎ একটি অংশ। মানুষ যতটুকু না নিজের চিন্তায় সময় নষ্ট করে, তার চেয়ে অধিক সময় নষ্ট করে অন্যের চিন্তায়। বন্ধু হোক বা শত্রু, আপন হোক বা পর, অন্য লোকদের পিছনেই কেটে যায় জীবনের সিংহভাগ সময়। নিজের আখিরাত বিনির্মাণে সে বড়ই নির্লিপ্ত। এ ব্যাপারে সে একেবারেই চিন্তামুক্ত। কিন্তু যখন তার মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়ে যায়, যখন সে আখিরাতের প্রবেশদ্বার দেখতে পায়, তখন আফসোস ও হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকে না। সারাজীবনের রক্ত-ঘামে অর্জিত তার ধন-সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি ও আত্মীয়-স্বজন সবই থেকে যায়, তার সাথে থেকে যায় কেবল তার নেক আমল।

এ তিক্ত সত্যটিই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত সুন্দর করে আমাদের জানিয়ে গেছেন! ভালো-মন্দ ও হালাল-হারামের পরোয়া না করে দুনিয়ার পিছনে অন্ধভাবে ছুটে চলা মানুষদের জন্য তিনি কত স্পষ্ট ভাষায় সাবধান-বাণী উচ্চারণ করেছেন! মৃত্যুকে ভুলে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া উদাসীন লোকদের সতর্ক করে তিনি বলেছেন, ‘তিনটি বস্তু মৃত ব্যক্তির পিছনে পিছনে যায়। তন্মধ্যে দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সঙ্গে থেকে যায়। তার পরিবার, তার অর্থ-সম্পদ ও তার আমল পিছনে পিছনে যায়। (দাফনের পর) তার পরিবার ও তার অর্থ-সম্পদ ফিরে আসে, আর তার আমল তার সঙ্গে থেকে যায়।’ [সহিহুল বুখারি : ৬৫১৪; সহিহু মুসলিম : ২৯৬০, সুনানুত তিরমিজি : ২৩৭৯]

বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষের ইমান, আমল ও আখলাকের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। দ্বীন থেকে বিমুখতার মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চারিদিকে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই সাথে উদাসীনতার পরিমাণও বেড়ে চলছে। অন্যের মৃত্যু থেকে না নেওয়া হচ্ছে কোনো শিক্ষা, আর না গ্রহণ করা হচ্ছে এর জন্য কোনো প্রস্তুতি। অথচ মৃত্যু এমন এক সত্য, যার মুখোমুখী আমাদের হতেই হবে। আখিরাত এমন এক বাস্তবতা, যেখানে আমাদের যেতেই হবে। কিন্তু চিরস্থায়ী আখিরাতকে ভুলে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে নিয়েই আমরা মজে আছি। আছে কি আমাদের কোনো প্রস্তুতি? আমরা কি পেরেছি আমাদের আখিরাতকে বিনির্মাণ করতে? আমাদের জান্নাতকে সুসজ্জিত করতে? চলুন আজ মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে কিছু মুজাকারা করি।

১. আমাদের প্রথম করণীয় হলো, আমাদের আমল নষ্ট হওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেওয়া। যেমন : কারও গিবত বা পরনিন্দা করা, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, অন্যের জমি-জমা, অর্থ-সম্পদ বা কোনো হক নষ্ট করা, কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি। এসব কাজ থেকে আমাদের পুরোপুরি নিবৃত্ত থাকতে হবে। নইলে যত আমলই করা হোক, সব নষ্ট হয়ে যাবে।

২. আমাদের দ্বিতীয় করণীয় হলো, আমাদের সকল নেক আমলের ক্ষেত্রে নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নেওয়া। বর্তমানে কোনো কিছু করলেই অনলাইনে যেভাবে শো-অফ করা হয়, তাতে কিছু মানুষের বাহবা পেলেও নিজের মূল্যবান আমলগুলো সব মূল্যহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এজন্য আমলের পরিমাণ অল্প হলেও নিয়তে যেন কোনো সমস্যা না থাকে, তা নিশ্চিত করা।

৩. আমাদের তৃতীয় করণীয় বিষয় হলো, গুনাহ থেকে বিরত থাকা; এমনকি গুনাহের আসবাবকেও বর্জন করা। কারণ, কেউ বলতে পারে না, কার কখন মৃত্যুর সময় চলে আসে। তাই -আল্লাহ মাফ করুন- এমন যেন না হয় যে, গুনাহরত অবস্থায়ই কারও মৃত্যু এসে গেল! সর্বদা তাওবার ওপর থাকতে হবে। কখনও গুনাহ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তাওবা করে নিতে হবে।

৪. আমাদের চতুর্থ করণীয় হলো, সময়ের সদ্ব্যবহার করা। কোনোভাবেই সময়কে নষ্ট করা যাবে না। আমাদের সময় যেন কেবল আল্লাহর ইবাদতে, কিংবা হালাল উপার্জনে কিংবা প্রয়োজনীয় বিশ্রামে কাটে। জীবনের সময় খুবই স্বল্প, তাই বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব ও আড্ডাবাজি করে কিংবা কারও সাথে অপ্রয়োজনীয় তর্ক-বিতর্কে সময় নষ্ট করা বোকামি বৈ কিছু নয়।

৫. আমাদের পঞ্চম করণীয় হলো, সহিহ হাদিসসমূহে বর্ণিত বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া। বিভিন্ন সুরা তিলাওয়াত ও দুআ-জিকিরের আমল নিয়মিত করা। এখানে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন বই বা আলিমদের থেকে আমরা এসব আমল জেনে নিতে পারি। তবে যে আমলই করা হোক, চেষ্টা করতে হবে তা যেন নিয়মিত করা হয়।

আজ এতটুকুই। আমরা প্রত্যেকেই যদি চিন্তা করি তাহলে হয়তো মৃত্যুর প্রস্তুতির জন্য আরও অনেক করণীয় বের হয়ে আসবে। বস্তুত মৃত্যুর চিন্তা ও আখিরাতের ফিকিরই হলো মূল বিষয়। সুতরাং আমরা যদি নিজেদের ইমান, আমল ও আখলাকের দিকে দৃষ্টি দিই তাহলে নিজেরাই বুঝতে পারব আমাদের কী করতে হবে, আর কী ছাড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে একেকজনের প্রস্তুতি হয়তো একেক রকম হবে। আর শক্তি, সামর্থ্য ও রুচির ভিন্নতার কারণে এটাই স্বাভাবিক। তবে একটি বিষয়ে আমাদের একক নীতি গ্রহণ করতে হবে—মৃত্যুকালে যেন আমাদের কর্মের জন্য কোনো আফসোস করতে না হয়। এজন্য যা যা করার, সময় থাকতেই করে ফেলা উচিত। মৃত্যুক্ষণ এসে গেলে তখন শত আফসোস করেও কোনো লাভ হবে না।