Get Mystery Box with random crypto!

‘কঠোর শরিয়া আইন’ নিয়ে তুলকালাম চলছে। ‘শরিয়া আইন’ কী? ‘শরিয়া আ | আল-জামী

কঠোর শরিয়া আইন’ নিয়ে তুলকালাম চলছে।
‘শরিয়া আইন’ কী?

‘শরিয়া আইন’ হলো চোরের হাত কেটে দেওয়া। (এর জন্য সুনির্ধারিত শর্ত-শারায়েত আছে। যেকেউ চোর নয় এবং যেকোনো কিছুর জন্যও হাত কাটা নয়।) চোরের শাস্তি নিশ্চিত হলে ছিনতাইকারী, উটকো ঝামেলাকারীরাও আইনের আওতায় এসে দমে যেতে বাধ্য হবে। আপনাকে মন্ত্রী হয়ে পুলিশ প্রোটেকশনে থেকেও মোবাইল হারাতে হবে না। যাত্রাবাড়ী গাবতলীতে বাসের জানালা দিয়ে থাবা মেরে আপনার মোবাইল নিয়ে দৌড় দেবে না। ফ্যামিলি নিয়ে নিরিবিলি কোথাও গিয়ে উটকো মস্তানদের খপ্পরে পড়তে হবে না। রাতের দুইটায় সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ডে নেমে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সব খোয়াতে হবে না। মলম পার্টি আপনার ব্যাগ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে পারবে না। কুরবানির গরুর গাড়িতে চাঁদাবাজি হবে না। সর্বত্র আপনি হবেন নির্বিঘ্ন।

বিবাহিত কেউ অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হলে পাথর নিক্ষেপে হত্যা এবং অবিবাহিত কেউ এই কাজে জড়ালে ১০০ বেত্রাঘাত ভোগ করতে হবে। (এর জন্যও সাক্ষীসাবুদ এবং স্বীকারোক্তি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে ফান্দে ফেলতে অথবা মানহানি ঘটাতে চাইলে উলটো নিজেকে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে।) সুতরাং অবৈধ মিলন করে সন্তান উৎপাদন এবং তাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে বেঁচে যাবার সুযোগ এখানে নেই। এবরশন হবে না। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে বাবা-মা শঙ্কিত থাকতে হবে না। সমাজে সম্মান খোয়া যাবার আশঙ্কা কমে যাবে। ভুল করে ফেলে সতীত্ব হারিয়ে সারাজীবন কাঁদতে হবে না। ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ ঘটবে না। যেখানে সাময়িক উত্তেজনায় পরস্পর সম্মতিতে অবৈধ যৌনাচারই নিষিদ্ধ, সেখানে ধর্ষণ করার দুঃসাহস কেউই করবে না। পরকীয়া থেমে যাবে; আপনার সুখের সংসার ভাঙবে না। দেশে বউ থুয়ে বিদেশ গিয়ে টেনশন পোহাতে হবে না।

বিনা অপরাধে কারও রক্ত ঝরালে তার কিসাস বা সমপরিমাণ সাজা ভোগ করতে হবে। এই আইনে খুন করে বেঁচে যাবার সুযোগ থাকবে না। চাই সেটা সেজান জুসের মতো ঘটনা হোক; নারায়ণগঞ্জের সেই সেভেন মাডার ঘটুক; রানা প্লাজা ধসে পড়ুক; মুনিয়া মারা পড়ুক; জমি নিয়ে বিরোধ লাগুক। রক্তের মূল্য এখানে রক্ত। ভিক্টিমের ক্ষমা ছাড়া বা আইনের কাছে নতি স্বীকার ছাড়া টাকার জোরে বেঁচে যাবার সুযোগ নেই। এই আইন জারি হলে সন্ত্রাসের নৈরাজ্যও কমে যাবে। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ক্যাডারগিরি বন্ধ হবে। ক্ষমতার দাপটে কেউ আপনাকে খুনের হুমকি দিতে পারবে না। আপনার জমি দখল করতে খুন করে লাশ গুম করে ফেলেও বেঁচে যেতে পারবে না। ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ বলে কেউ পার পেয়ে যাবে না; সবাইকে বিচারের আওতায় আসতে এবং আনতে হবে।

‘শরিয়া আইন’-এ পতিতাবৃত্তি বন্ধ। দুর্নীতি বন্ধ। ঘুষ বন্ধ। সুদ বন্ধ। টেন্ডারবাজি বন্ধ। কালোবাজারি বন্ধ। বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ। বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ।

‘শরিয়া আইন’ চালু হলে সরকারি-বেসরকারি কোনো খাতেই দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না। চাকরির শেষ দিনে রাবির ভিসি অবৈধভাবে কাউকে নিয়োগ দিতে পারবে না। থানা কোর্ট রেজস্ট্রি অফিস—কোথাও সরকার নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত এক টাকাও খরচ হবে না। ৫ মিনিটের কাজে ৫ মিনিটই লাগবে, সপ্তাহ ধরে চরকির মতো ঘুরতে হবে না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক আর ক্ষমতাসীন ক্যাডারদেরকে চাঁদা দেওয়া লাগবে না। আপনার ১০ টাকার গাড়িভাড়া ১০ টাকাই থাকবে, চাঁদার কারণে ১৫ টাকা গুণতে হবে না। ‘শরিয়া আইন’ চালু হলে চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হবে না। আপনার অধিকার কিংবা সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে বিচারক ঘুষ খাবে না। ‘শরিয়া আইন’ চালু হলে বিপদে পড়ে ব্যাংক অথবা কারও থেকে ঋণ নিয়ে মাসে মাসে আপনাকে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ গুণতে হবে না। ১ লাখ টাকা ধার নিয়ে চক্রবৃদ্ধিতে সুদ গুণে আপনাকে ২ বছরে সুদে-আসলে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে আড়াই লাখ টাকা বা আরও বেশি গুণতে হবে না। ‘শরিয়া আইন’ চালু হলে রাস্তায় নারী-পুরুষের উগ্র চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বেপর্দার সুযোগ থাকবে না। যার দরুন বিভিন্ন অঞ্চলে সহস্র বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে ধসে যাবে না। রাস্তায় নারীর উদম চলাফেরা উস্কে দেওয়া কখনোই সভ্য সমাজের নিদর্শন নয়। পুঁজিবাদ ব্যবস্থা নিজেদের স্বার্থে এই সংস্কৃতি চালু করেছে এবং এর মাধ্যমেই তারা নারীকে পণ্য বানিয়ে নিতে পেরেছে। নারী স্বাধীনতা নামে বেপর্দার প্রসার ঘটিয়ে পণ্য হয়ে যাওয়া নারীদের ভদ্র সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপনের একটা সুযোগ তৈরি করা হয়েছে এবং এই পণ্য; তার উৎপাদক ও খদ্দেররাই ভদ্র সমাজকে সেক্যুলার সমাজে পরিণত করেছে। ‘শরিয়া আইন’ সাংস্কৃতিক এই আগ্রাসন রুখে দাঁড়াবে, বখে যাওয়া নারী-পুরুষদের উগ্রপনা থামাবে, তরুণ ও যুবকদের চরিত্র রক্ষায় কাজ করবে, হাজার বছরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে এবং বজায় রাখবে।

গণতন্ত্রের বর্তমান নিয়মে যতই বলুক, দেশ জনগণের, বাস্তবে যে তা নয়, এটা বোধহয় বলে বোঝানো লাগবে না। এখানে যা-কিছু ঘটে, সরকার নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ ‘শরিয়া আইন’-এ সরকার-জনগণ মিলেমিশে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখানে দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি সরকার, নিজের মনগড়া আইন, মতবাদ, ট্যাক্স ইত্যাদি চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ তার নেই। উদাহরণ দিই, বিবাহিত