Get Mystery Box with random crypto!

ফেসবুকে আরেকটি মারাত্মক ফেতনার নাম হলো “দ্বীনি ভাই বোন।” শুরু | আল-জামী

ফেসবুকে আরেকটি মারাত্মক ফেতনার নাম হলো “দ্বীনি ভাই বোন।”

শুরুটা মোটামুটি এরকমই হয় —

(প্রথম দিন)
“ভাইয়া আপনার লেখাগুলো আমার ভীষণ, ভীষণ ভালো লাগে!”
“জাজাকিল্লাহু খাইরন বোন।”

(দ্বিতীয় দিন)
“আপনি কিসে পড়েন ভাইয়া?”
“..........পড়ি। আপনি?”
“..........”
এরপর ধীরে ধীরে নানান কথা, নানান রঙ, নানা ঢঙ, মতবিনিময়, এলেম-কালামের সাথে একান্ত আলাপন!

(একমাস পর...)

পিক দেওয়া নেওয়া চলছে...! [ এভাবেই এক গুনাহ আরেক গুনাহকে টেনে আনে ]

“মাশাল্লাহ! তুমি দেখতে এত্ত কিউট! সত্যি বলছি, জান্নাতের হুরপরীরাও তোমায় দেখলে লজ্জায় মুখ লুকাবে! আল্লাহ পাক কতো সুন্দর করেই না বানিয়েছেন! এজন্যই তো আল্লাহ পাক বলেন— (কুরআনের আয়াত; রেফারেন্সসহ)”

“তুমিও তো কম সুন্দর না! কি নূরানী চেহারা! তোমার চেহারা থেকে নূরের আলোচ্ছটা যেন ঠিকরে ঠিকরে আমার চোখে এসে পড়তেছে। ইচ্ছে করছে দাড়িগুলো ধরি!”

“জানো, একমাস আগে আরও লম্বা ছিলো দাড়িগুলো আমার। তখনকার পিক দেখলে তোমার হয়তো আরও ভালো লাগতো। সমস্যা হলো তখনকার পিক নেই। তখন তো আর ছবি-টবি তুলতাম না তেমন!”

তখন শয়তানও—
“লাগ ভেলকি লাগ, চোখে মুখে লাগ! চ্যাটিং থেকে ডেটিং এর দিকে যাক, পার্কের এক কোণে তোদের শোভা পাক!”

এভাবেই চলতে থাকে দ্বীনি বোন থেকে দ্বীনি প্রেমিকায় পরিনত হওয়ার গল্পগুলো। ছবিতে ছবিতে চোখাচোখি, কল্পপ্রেমে উড়াউড়ি করে সেই গল্পরা তখন। ইনবক্স যেন পুরোপুরি শয়তানের আখড়ায় পরিনত হয়ে যায়।

তবে, ইনবক্সে যে ঠিক এমনই কথোপকথন হবে সেটাও না। হরেক রকমের শয়তানি কেমিস্ট্রি জমতে পারে। নতুবা কিছুই জমলো না, ছবি দেওয়া-নেওয়াও না, দ্বীনি বোনের সাথে শুধু কথাবার্তা হয়, ইসলামিক আলোচনা হয়। এটাও নেক সূরতে শয়তানের ধোঁকা। কেননা, ওই দ্বীনি ভাইয়ের মনে অটোমেটিক তখন কল্পনা চলতে থাকে, এই মেয়েটা বুঝি এমন রূপসী! ইশ... সে যদি আমার বউ হতো...! ব্যস হয়ে গেলো! এটা তো কেবল শুরু, কল্পনা গিয়ে ঠেকবে বাচ্চা-কাচ্চা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া পর্যন্ত!

আবার দ্বীনি বোনটার কল্পনার জগতেও শয়তান দাঁত কেলিয়ে অন্ধকারের আমন্ত্রণ জানায়, ধীরে ধীরে সে-ও হুজুরের মাইডে'তে জোব্বার ফটো দেখে টাসকি খেয়ে লাভ রিয়েক্ট দেয়, ক্রাস খেয়ে যায় পাঞ্জাবির নীল কালারের বোতামটা দেখেও!

মোটকথা, শয়তান তাদের কল্পনার জগতে হামলা বসিয়ে আরও বেশি বেশি চ্যাটিং করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়।

ধীরে ধীরে এটাই অন্তরের যেনায় রূপ নেয়, চোখের যেনায় রূপ নেয়, হাত, মুখ, কান ইত্যাদির... যেনার রূপ নেয়।

আর এমনই ধোঁকায় পড়ে হাজার হাজার ইমানদার যুবক-যুবতী, দ্বীনের পথে সবে মাত্র পা ফেলা ভাই-বোনগুলো পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। আবার তওবা করারও সুযোগ পায় না। কারণ গুনাহকে গুনাহ মনে না করলে, তওবা করবে কোত্থেকে?

বিশেষ করে, লেখকদের ক্ষেত্রে এমন ফেতনায় পরার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাদের কমেন্টবক্স, ইনবক্স মেয়েদের আনাগোনাও সবচেয়ে বেশি।

আর এভাবে ইনবক্সে কথোপকথন, নিঃসন্দেহে যেনার দিকে নিয়ে যায়, হোক সেটা অন্তরের যেনা মাত্র! কিন্তু এই মাত্রকে মাত্র ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

কেননা আল্লাহ পাক বলেন —
“আর তোমরা যেনা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (বনী-ইসরাঈল - ৩২)

এখন করণীয় কি, সেটাতে আসি। মাত্র ৩ টা কাজ এখানে করনীয়।

১. সবচেয়ে উত্তম হলো, কোনো রকমের মেয়েকে ফ্রেন্ডলিস্টে না রাখা। যদি দাওয়াতের খাতিরে রাখতে চান, তাহলে ফলো অপশন চালু করে দিন। আর মেয়েদের রিকুয়েষ্ট আসলে ডিলিট করে দিন, ডিলিট করলে অটো. ফলোয়ার হয়ে থাকবে তারা।

২. মেয়েদের কমেন্ট আসলে রিপ্লে করা থেকে বিরত থাকুন। যদি রিপ্লে দিতেই হয়, সতর্কতা অবলম্বন করুন। মাইডে' চেক করতে গিয়ে অনেক দ্বীনি বোনের পিক পেতে পারেন, (অনেক বোন আছে যারা চেহারার অর্ধেক করে পিক তুলে ডে'তে দেয়, পিছন থেকে পিক তুলে ডে'তে দেয়, কালো বোরখায় চোখে কাজল মেখে পিক তুলে দেয়) এ ধরনের দেখামাত্র আনফ্রেন্ড করে দিন।

৩. তওবা করে ফিরে আসুন। এতোদিন যতো দ্বীনি বোনের সাথে কথা হয়েছে সবাইকে উপরিউক্ত বিষয়গুলো বলে বিদায় নিন। পরিশুদ্ধ হৃদয় গঠনে আপনার আমার এই হিম্মত টুকুতে আল্লাহ পাক খুশি, এটুকু করাতে কলিজায় যদি রক্তক্ষরণ হয় তবে সেটা তো মোবারক রক্তক্ষরণ!

দু'টি পথ, আল্লাহকে খুশি করবেন? নাকি শয়তানকে?

দ্বীনিবোনদের ক্ষেত্রেও একই কর্তব্য। ভাইদের মিঠা কথায় ভুলবেন না। সবচেয়ে ভালো লেখক, দ্বীনদার ভাইটাই ধীরে ধীরে একদিন বলে উঠবে; “আপনার একটা পিক দিন!” আর আপনিও কাউকে উঠেপড়ে মেসেজ দিতে যাবেন না। দরকার ছাড়া কমেন্ট করার প্রয়োজন নেই, মনের আবেগ মনেই রাখুন। আল্লাহর জন্য নিজেকে গুটিয়ে রাখুন। সবাই হয়তো ভাববে, আপনি নির্জীব হয়ে গেছেন। অথচ এটা কোনো নির্জীবতা নয় এটা তো জান্নাতে আনন্দ-উল্লাসের নেশায় এক নিশ্চুপ উন্মাদনা!